ক’দিন ধরে আনন্দ, উৎসব আর মিলনমেলায় ভরা কলকাতার আকাশ আজ যেন হঠাৎই বিষণ্ণ হয়ে উঠল। বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয়া দুর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বিদায়ের গান উঠল সর্বত্র— “আজ মা যাবে, আসছে বছর আবার হবে।”
শহরের প্রতিটি প্যান্ডেল, প্রতিটি রাস্তায় আজ ছিল এক অনন্য আবহ। সকালে সিঁদুর খেলা দিয়ে শুরু হয় বিজয়ার আচার, যেখানে রঙে রঙে মেতে ওঠেন শহরের নারীরা। একে অপরের কপালে সিঁদুর ছড়িয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে তাঁরা বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে। এরপর বিকেল থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন। গঙ্গার ঘাটগুলোতে আজ উপচে পড়া ভিড়— ভক্ত, দর্শনার্থী, ফটোগ্রাফার— সবাই মিলে চোখের জলে ও হাসির মিশ্রণে দেবীকে বিদায় জানান।
এবারও কলকাতার দুর্গাপূজা যেন বিশ্ব উৎসবের রূপ নিয়েছিল। UNESCO স্বীকৃতির সুবাদে এবার দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। কলকাতার বুকে থিম প্যান্ডেলের ঝলক, আলোকসজ্জার মায়াজাল, ঢাকের বাদ্য আর ভিড় সামলানো কলকাতা পুলিশ— সব মিলিয়ে কয়েকদিন ধরে যেন অন্য এক শহরে রূপান্তরিত হয়েছিল কলকাতা।
তবে আজ দশমীর বিকেল থেকে ধীরে ধীরে চেহারা পাল্টে যায় শহরের। আনন্দের ভিড়ে মিশে যায় এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা। ঢাকের তালে, ধুনুচির নাচে, আর উচ্ছ্বাসের মাঝেই লুকিয়ে থাকে বিদায়ের ব্যথা। প্রতিমা বিসর্জনের সময় গঙ্গার ঢেউ যখন আলতো করে ছুঁয়ে যায় প্রতিমার শরীর, তখন ভক্তদের মুখে একসঙ্গে ভেসে ওঠে সেই চিরন্তন স্লোগান— “আসছে বছর আবার হবে।”
দশমীর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হলো উৎসব, কিন্তু শুরু হলো নতুন অপেক্ষা। আগামী বছর আবার মা আসবেন, আবার মিলবে সবার আনন্দে, ভিড়ে, আলোয়, উল্লাসে। আপাতত বিদায়ের বেদনাকে সঙ্গী করেই বাঙালি শুরু করল আগামী বছরের প্রস্তুতি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন