আপনার শরীরের ভেতরে যে নিস্তব্ধ কারখানাটি দিনরাত কাজ করে চলেছে, তা হলো আপনার কিডনি। এই দুই শিম-আকৃতির অঙ্গ নিরলসভাবে রক্ত শোধন করে, বিষাক্ত বর্জ্য এবং অতিরিক্ত জল বের করে দেয়, যা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু জানেন কি, জীবনযাপনের সামান্য কিছু ভুলের কারণেই এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি তিলে তিলে নিঃশব্দে ক্ষতির মুখে পড়ছে? বর্তমানে কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান হার এক ভয়াবহ বিপদ সংকেত, যা ইঙ্গিত দেয়—এখনই সচেতন না হলে বড় বিপদ অনিবার্য। তাই আপনার এই 'নিঃশব্দ যোদ্ধা'কে রক্ষা করতে আজই কিছু কঠিন প্রতিজ্ঞা নেওয়া জরুরি।
কিডনির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ছোট রক্তনালীগুলির উপর নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে সেগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে শুরু করে। ঠিক তেমনই, রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণ কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের ক্ষতি করে। তাই কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে হলে সবার আগে এই দুটি বিষয়কে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন, রক্তচাপ ও শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করান এবং তা স্বাভাবিক রাখার জন্য সঠিক ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন—এটাই কিডনি বাঁচানোর প্রথম ও প্রধান শর্ত।
এছাড়া আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আরও কিছু বদল আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা কিডনির জন্য জীবনদায়ী। জলই আপনার কিডনিকে সচল রাখতে এবং বর্জ্য পদার্থ সহজে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে জল পান করতে হবে। অন্যদিকে, আপনার প্লেট থেকে কমাতে হবে সোডিয়াম বা লবণের পরিমাণ। প্যাকেজড খাবার, ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার কিডনির উপর চাপ বাড়ায়। এছাড়াও, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যথেচ্ছ ব্যথানাশক ওষুধ (NSAIDs) খাওয়া কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। সামান্য ব্যথা বা জ্বরের জন্য প্রায়শই আমরা যে ওষুধগুলি খাই, তার অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
তাই, কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে সুষম খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা অপরিহার্য। নিজেকে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মনে হলে অবশ্যই নিয়মিত কিডনি ফাংশন পরীক্ষা করান—যেমন ইউরিন অ্যালবুমিন বা ব্লাড ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করান। মনে রাখবেন, কিডনি রোগ সাধারণত প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। তাই নীরব ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতাই হলো একমাত্র ঢাল। নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, আর কিডনিকে দিন তার প্রাপ্য সম্মান—আপনার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে সেখানেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন